কক্সবাজার প্রতিনিধি :
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে অন্তত ২০ দিনের বেশি বন্ধ ছিল টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌ চলাচল। তবে প্রশাসনের অনুমতিতে উত্তাল সাগরের বিকল্প পথে ঝুঁকি নিয়ে কিছু সংখ্যক নৌযান চলাচল করলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো অস্বাভাবিক।
এতে জরুরী চিকিৎসা, নিত্যপণ্যের যোগান ও প্রয়োজনীয় কাজে যাতায়তসহ নানা ভোগান্তিতে রয়েছে সেন্টমার্টিনবাসী। অন্যদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলা সংঘাতে ওপার থেকে ভেসে আসা গুলির শব্দে আতঙ্কিত দ্বীপবাসী।
ভুক্তভোগী জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, নাব্যতা সংকটের কারণে বাংলাদেশি নৌযানগুলোকে নাফ নদীর মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া অংশ হয়ে যাতায়ত করায় সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি। তাদের দাবী শাহপরীরদ্বীপ এলাকায় ভরাট হয়ে যাওয়া অংশ খনন করে নাব্যতা সৃষ্টির পাশাপাশি সাগরের গোলারচর পয়েন্টে জেটি ঘাট নির্মাণ করলে’ই সংকটের সমাধান হবে।
এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বীপটির যোগাযোগ সংকটের স্থায়ী সমাধানে নাফ নদীতে খনন কাজের পাশাপাশি নতুন জেটি ঘাট নির্মাণে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
গত বছরের মধ্য অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলছে দেশটির সরকারি বাহিনীর সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিও সংঘাত। সম্প্রতি নাফ নদীর বাংলাদেশের জলসীমার কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে মিয়ানমারের নৌবাহিনীও ওই সংঘাতে অংশ নেয়। বিদ্রোহী গোষ্ঠীও মিয়ানমার নৌ বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে চালায় ভারী গোলাবর্ষণ। এতে বিবাদমান দুইপক্ষের মধ্যে চলছে তীব্র লড়াই। যার প্রভাব পড়েছে সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফের সীমান্তর্তী বিভিন্ন এলাকায়।
তারমধ্যে গত ৫ জুন নাফ নদীর জলসীমায় নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় প্রথমবারের মত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী নৌযান লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এরপর আরও কয়েকবার সেন্টমার্টিন যাতায়তকারী নৌযান লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। এতে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই রুটে বন্ধ করে দেওয়া হয় নৌযান চলাচল।
এদিকে সেন্টমার্টিনের সাথে যোগাযোগে প্রধান মাধ্যম নৌপথ নাফ নদীর মোহনার দুই স্থানে জেগে উঠেছে ডুবোচর। এই ডুবোচরের কারণে সেন্টমার্টিনে যাতায়তকারী নৌযানগুলোকে নাফ নদীর মিয়ানমার জলসীমার সামান্য একটি অংশ ব্যবহার করতে হয়। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ এলাকায় নাফ নদীর ওই অংশে ড্রেজিং করা হলে সেন্টমার্টিনে যোগাযোগের জন্য মিয়ানমারের জলসীমা ব্যবহার করতে হবে না। এতে সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে বলে জানান দ্বীপবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাফর আলম জানান, সীমান্তে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দ্বীপের মানুষ এক প্রকার সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। এতে চিকিৎসা, নিত্যপণের যোগান ও প্রয়োজনীয় কাজে যাতায়তসহ নানা ভোগান্তিতে পড়েছে। বর্তমানে বিকল্প পথে দৈনিক কয়েকটি করে ট্রলার যাতায়ত করলেও সাগর উত্তাল থাকায় চলাচলে জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই নাফ নদীতে জেগে উঠা ডুবোচর খননের পাশাপাশি সাগরের গোলারচর পয়েন্টে নতুন একটি জেটি ঘাট নির্মাণের দাবি দ্বীপবাসীর।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, ডুবোচরের কারণে নাফ নদীর জলসীমায় শাহপরীরদ্বীপের ওই অংশ দিয়ে সেন্টমার্টিনে নৌযানগুলোর যাতায়তের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। জেগে উঠা ডুবোচরের ওই অংশটি দ্রুত খনন করার পাশাপাশি নতুন একটি জেটি ঘাট নির্মাণ করা হলে সংকটের স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব। এতে সেন্টমার্টিনের সাথে যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি সময়ও কম ব্যয় হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে সেন্টমার্টিনে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রশাসন দ্বীপটিতে জাহাজে করে খাদ্যসহ নিত্যপণ্য পাঠানোর পাশাপাশি সাগরের বিকল্প পথে মানুষের যাতায়তের ব্যবস্থা নিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে খাদ্যপণ্যের আরও একটি চালান পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এটি আসলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। নাফ নদীর ভরাট হওয়া অংশটি খননের পাশাপাশি সাগরের গোলারচর পয়েন্টে নতুন একটি জেটি ঘাট নির্মাণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে সীমান্তের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে টেকনাফ ২ বিজিবি’র ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-